News

DROHO
Fonts

প্রথম আলো’র ফিচারে লিপিকলা

Prothom Alo Nationl Newspaper নিউজ লিপিকলায় দ্রোহ ও মিছিলের ভাষা মিছিলের স্লোগানে স্লোগানে সারা শহর উত্তপ্ত। শুধু শহর বলছি কেন, গোটা দেশ থেকেই এ যেন একই স্বরে আওয়াজ উঠছে সব দিক থেকে। ঢাকার প্রতিটি রাস্তা থেকে মিছিলে মিছিলে মানুষের ঢল। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সবার এক কণ্ঠস্বর। প্রত্যেক মানুষ তাঁর অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ শক্তি ও সামর্থ্য দিয়ে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে শুরু করে রাজপথ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গগনবিদারী স্লোগানে একটাই দাবি—দফা এক, দাবি এক/ স্বৈরাচারের পদত্যাগ। চারপাশে ভয়ের আবহ, তবু সেই ভয়কে উপেক্ষা করে সবাই রাস্তায় নেমেছেন। এমন এক উত্তাল সময়ে, একজন বাংলা অক্ষরশিল্পের কারিগর হিসেবে, স্বৈরাচারের প্রতি ক্রোধ ও আক্রোশ আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করছিল। গলি থেকে ভেসে আসা প্রতিটি স্লোগান আমাকে অস্থির করে তুলেছিল। আমার যাবতীয় কর্মযজ্ঞের ব্যস্ততা আর জীবনযাপনের ভেতর জুলাই আন্দোলনের প্রভাবে হঠাৎ কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কয়েকটি পঙ্‌ক্তি অবচেতনভাবে আমার চেতনাকে গ্রাস করে ফেলে। নানান জায়গা থেকে সতর্কতামূলক সচেতনবার্তা আবার অন্যদিকে ঘোষণা দিয়ে একপ্রকার হুমকি প্রদান; আন্দোলনের অংশগ্রহণের পরিণতিতে আমার কী ক্ষয় হতে পারে, এ রকম সচেতনতার নামে হুমকি দেখিয়ে যেন মূক, অন্ধ ও বধির করে ফেলতে চাইছিল। কিন্তু প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলের সংবাদ এই সব ভয় স্পর্শ করেনি। এসব চাপ ও অস্থিরতার ভেতর দিয়েই অন্যদিকে অনবরত বেজে চলছে— ‘আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদআমি চিনেছি আমারেআজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ।’ জুলাইয়ের ৩০ তারিখ। সারাটি দিন এই পঙ্‌ক্তি জপে চলছি মনে মনে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার মুহূর্তেও এই পঙ্‌ক্তি আমাকে ঘুমাতে দেয় না। একদিকে একের পর এক ছাত্রদের গুলি করে যাচ্ছে খুনির দল, অন্যদিকে দ্বিগুণ হয়ে ছাত্র-জনতা আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে। কারও মনে ভয় নেই, কারও পিছু হটার সুযোগ নেই। এমনকি যারা আন্দোলনে সরাসরি অংশ নিচ্ছেন না, তাঁদের মনেও প্রবল উত্তেজনা। মনে হচ্ছিল, পুরো জাতি যেন ঘুমহীন হয়ে পড়েছে। ওই মৃত্যুর দিনগুলোর কথা ভেবে এখনো শিউরে উঠতে হয়। সেই সব দিনের অস্থিরতা অন্য অনেকের মতো আমাকেও ঘুমাতে দেয়নি। মাথার মধ্যে যে পঙ্‌ক্তি অনবরত চলতেই আছে; সেই বোঝা উত্তরণের একটি উপায় হঠাৎ আবিষ্কার করে মধ্যরাতে বিছানা ছেড়ে আমি উঠে পড়ি। উঠে, টেবিলে রাখা ব্রাশপেন নিয়ে কার্টিজ কাগজের ওপর অক্ষরের বিদ্রোহী চরিত্রে এই পঙ্‌ক্তি লিখি। অক্ষরের বিদ্রোহী চরিত্র কী? পারিবারিক সুবাদে কৈশোর থেকেই দেয়াললিখনের চর্চা ছিল আমাদের। আমরা দেখি, দেয়াললিখনের আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র রয়েছে। বিশেষ করে বাম রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর প্রতিবাদ ও স্লোগানের প্রধান ক্যানভাস হলো দেয়াল। দেয়ালে দেয়ালে লেখা থাকে তাদের আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ও প্রতিবাদের ভাষা। সেসব ভাষার আকৃতি ও গঠন বাংলা অক্ষরশিল্পে অঘোষিতভাবেই একটা স্বাক্ষর তৈরি করেছে। যে স্বাক্ষরের নাম আমরা দিতে পারি ‘বিপ্লবী’। অর্থাৎ দেয়ালের গায়ে প্রতিবাদের ভাষা দেখে আমরা সহজে বুঝতে পারি, এটি বিপ্লবের ভাষা। সেই বিপ্লব ও বিদ্রোহের স্বভাব-আকৃতিতে আমি নজরুলের বিদ্রোহী কবিতার সেই পঙ্‌ক্তি প্রাথমিকভাবে ব্রাশপেনে লিখি। ‘আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ/ আমি চিনেছি আমারে/ আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ।’ এই লেখার অক্ষরগুলোর চরিত্র ও স্বভাব তার নিজস্ব প্রতিবাদের ভাষা ধারণ করে। তারপর ডিজিটালি একটা কার্ড ডিজাইন করে এই লেখা সোশ্যাল মিডিয়ায় দিলে দেখি কিছুক্ষণের মধ্যেই এটি ছড়িয়ে পড়ে অনেক জায়গায়। মানুষ এই টাইপোগ্রাফির মধ্যে যেন নিজেদের আন্দোলনের প্রতিচ্ছায়া দেখতে পায়। এই অনুপ্রেরণা থেকে ৩১ জুলাই সিদ্ধান্ত নিই এই টাইপফেস সম্পূর্ণ গ্লিফস বা অক্ষরসহ পূর্ণাঙ্গ ফন্ট আকারে উন্মুক্ত করে দিই সবার জন্য। এই আন্দোলন শুধু রাজপথেই নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ও ডিজিটাল মাধ্যমেও ছড়িয়ে দিতে হবে। এবং তখনই ওই উত্তাল পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে দিনরাত টানা কাজ করে তিন শর ওপরে গ্লিফস তৈরি করি এক দিনে। লিপিকলার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই আমাদের সামনে হাজির হয়েছে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন। ফলে আমাদের দীর্ঘ প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা একদিকে রেখে, গণ-অভ্যুত্থানকে সামনে রেখে সিদ্ধান্ত নিই লিপিকলার প্রথম ফন্ট হবে ‘দ্রোহ’। কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার অনুপ্রেরণায় জুলাই আন্দোলনকে উৎসর্গ করে এই ফন্টের নামকরণ করা হয় ‘দ্রোহ’। ‘দ্রোহ’ শুধু একটি ফন্ট নয়, এটি আন্দোলনের একটি ভাষা হিসেবে সাক্ষী হয়ে আছে। অভ্যুত্থানের অংশ হয়ে লিপিকলা ও দ্রোহ ছড়িয়েছে স্লোগানে স্লোগানে। আন্দোলনের প্রতিটি ব্যানারে, পোস্টারে, সোশ্যাল মিডিয়ার এই ফন্ট ব্যবহৃত হতে শুরু করে। আমি অনুভব করলাম, টাইপোগ্রাফি শুধু নান্দনিকতার জন্য নয়, এটি সময়ের ভাষা হয়ে উঠতে পারে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা দেখেছি, অক্ষরের মধ্যেও প্রতিবাদ সম্ভব। লিপিকলা থেকে তৈরি এই ফন্ট শুধু ডিজিটাল স্পেসেই নয়, আন্দোলনের ব্যানার, পোস্টার এবং রাস্তার দেয়ালে লিখিত ভাষায় রূপান্তরিত হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা আমাকে আরও বেশি বিশ্বাস করিয়েছে যে বাংলা অক্ষরশিল্প একটি শক্তিশালী প্রতিবাদের মাধ্যম হতে পারে। আমাদের সামনে এখনো অনেক পথ বাকি। এই ফন্ট কেবল শুরু, সামনে আরও অনেক ধরনের বৈশিষ্ট্যগত টাইপোগ্রাফি তৈরি করতে চাই। আমরা চাই, বাংলা অক্ষরও বিপ্লবের ভাষা হয়ে উঠুক। ‘দ্রোহ’ আমাদের প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু এটা শেষ নয়; বরং নতুন একটা অধ্যায়ের সূচনা। লিপিকলা টাইপ ফাউন্ড্রি নামে একটি প্ল্যাটফর্ম শুরু করেছিলাম করোনাকালে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, বাংলা টাইপফেসের সম্ভাবনাকে আরও প্রসারিত করা। দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতির মধ্য দিয়েই ইতিমধ্যে প্রায় এক শটি বাংলা সম্পূর্ণ নতুন টাইপফেস লিপিকলা থেকে আমরা ডিজাইন করেছি। Read from Prothom Alo Prothom Alo Nationl Newspaper লিপিকলায় দ্রোহ ও মিছিলের ভাষা মিছিলের স্লোগানে স্লোগানে সারা শহর উত্তপ্ত। শুধু শহর বলছি কেন, গোটা দেশ থেকেই এ যেন একই স্বরে আওয়াজ উঠছে সব দিক থেকে। ঢাকার প্রতিটি রাস্তা থেকে মিছিলে মিছিলে মানুষের ঢল। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সবার এক কণ্ঠস্বর। প্রত্যেক মানুষ তাঁর অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ শক্তি ও সামর্থ্য দিয়ে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে শুরু করে রাজপথ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গগনবিদারী স্লোগানে একটাই দাবি—দফা এক, দাবি এক/ স্বৈরাচারের পদত্যাগ। চারপাশে ভয়ের আবহ, তবু সেই ভয়কে উপেক্ষা করে সবাই রাস্তায় নেমেছেন। এমন এক উত্তাল সময়ে, একজন বাংলা অক্ষরশিল্পের কারিগর হিসেবে, স্বৈরাচারের প্রতি ক্রোধ ও আক্রোশ আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করছিল। গলি থেকে ভেসে আসা প্রতিটি স্লোগান আমাকে অস্থির করে তুলেছিল। আমার যাবতীয় কর্মযজ্ঞের ব্যস্ততা আর জীবনযাপনের ভেতর জুলাই আন্দোলনের প্রভাবে হঠাৎ কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কয়েকটি পঙ্‌ক্তি অবচেতনভাবে আমার চেতনাকে গ্রাস করে ফেলে। নানান জায়গা থেকে সতর্কতামূলক সচেতনবার্তা আবার অন্যদিকে ঘোষণা দিয়ে একপ্রকার হুমকি প্রদান; আন্দোলনের অংশগ্রহণের পরিণতিতে আমার কী ক্ষয় হতে পারে, এ রকম সচেতনতার নামে হুমকি দেখিয়ে যেন মূক, অন্ধ ও বধির করে ফেলতে চাইছিল। কিন্তু প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলের সংবাদ এই সব ভয় স্পর্শ করেনি। এসব চাপ ও অস্থিরতার ভেতর দিয়েই অন্যদিকে অনবরত বেজে চলছে— ‘আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদআমি চিনেছি আমারেআজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ।’ জুলাইয়ের ৩০ তারিখ। সারাটি দিন এই পঙ্‌ক্তি জপে চলছি মনে মনে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার মুহূর্তেও এই পঙ্‌ক্তি আমাকে ঘুমাতে দেয় না। একদিকে একের পর এক ছাত্রদের গুলি করে যাচ্ছে খুনির দল, অন্যদিকে দ্বিগুণ হয়ে ছাত্র-জনতা আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে। কারও মনে ভয় নেই, কারও পিছু হটার সুযোগ নেই। এমনকি যারা আন্দোলনে সরাসরি অংশ নিচ্ছেন না, তাঁদের মনেও প্রবল উত্তেজনা।

Fonts

সমকালের পাতায় লিপিকলা

The Daily Samakal Nationl Newspaper নিউজ `বাংলার প্রথম প্রতিবাদী টাইপফেস ও লিপিকলা টাইপ ফাউন্ড্রি’ দিন দিন বাংলা ফন্ট বর্ণিল হয়ে উঠছে। দেশের তরুণরা বাংলা টাইপোগ্রাফির জগতে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। তারা বাংলা টাইপ ডিজাইন ও ফন্ট অর্থের বিনিময়ে কেনার মতো মূল্যবান করে তুলছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে বাংলা লিপির নান্দনিক উৎকর্ষে কাজ করা এমনই দুই তরুণের সৃজনশীল জগৎ লিপিকলা ও বেঙ্গল ফন্টস-এর কথা তুলে ধরছেন আশিক মুস্তাফা   বাংলা টাইপোগ্রাফির জগতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে লিপিকলা টাইপ ফাউন্ড্রি। এই উদ্যোগ শুধু একটি ফন্ট ডেভেলপমেন্ট প্ল্যাটফর্মই নয়, বরং বাংলা অক্ষরশিল্পের এক বিস্তৃত শৈল্পিক গবেষণাগার। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান কাজী যুবাইর মাহমুদ। কেন এই পথে হাঁটলেন– এমন প্রশ্নের উত্তরে কাজী যুবাইর মাহমুদ বলেন, ‘লিপিকলা টাইপ ফাউন্ড্রির পেছনে রয়েছে এক দীর্ঘ স্বপ্নের পরিক্রমা। শৈশব থেকেই বাংলা অক্ষরশিল্পের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও চর্চা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। পৃথিবীর অন্যান্য ভাষার জন্য শত শত উন্নতমানের ফন্ট পাওয়া গেলেও বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে সেই ঘাটতি স্পষ্ট। বিশ্বের ৩০ কোটির বেশি মানুষ বাংলায় কথা বলে, অথচ আমাদের ভাষার জন্য শিল্পমানে উত্তীর্ণ ফন্টের সংখ্যা খুবই কম। অন্যান্য ভাষার চেয়ে বাংলায় ফন্ট তৈরি করা অতিরিক্ত কষ্টসাধ্য কাজ। যুক্তবর্ণসহ বিশালসংখ্যক গ্লিফ তৈরি করতে হয় বাংলায়, যা সময়সাপেক্ষ ও জটিল। একই সঙ্গে অক্ষরের শেইপ ঠিক রেখে প্রতিটি গ্লিফস করার মতো ডিজাইনার বিরল। বর্তমানে ডিজাইন ও টাইপোগ্রাফির আধুনিকতার যুগে এসেও আমরা হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি উন্নত ও সুপার ফিনিশড বাংলা ফন্ট দেখতে পাই। এ ছাড়া রাস্তাঘাটে, বিলবোর্ডে, লোগোতে কিংবা পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে ব্যবহৃত বাংলা টাইপোগ্রাফির বেশির ভাগই অপরিপক্ব, অপরিকল্পিত ও দুর্বল মনে হয়। এটি আমাকে ব্যথিত করে। সেই অভাববোধ থেকেই জন্ম নেয় লিপিকলা।’ লিপিকলার যাত্রাকবে শুরু লিপিকলার যাত্রা– এই প্রশ্নের উত্তরে কাজী যুবাইর মাহমুদ বলেন, “২০২০ সালে করোনাকালীন সংকটের মধ্যে আমি লিপিকলার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে শুরু করি। গত পাঁচ বছরে আমরা প্রায় ১০০টি ফন্ট ডিজাইন করেছি। এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে লিপিকলার ঘোষণা দেওয়া হয়নি। এর আগেই দেশে ঘটে গেছে এক গণঅভ্যুত্থান, স্বৈরাচারের পতন। এ আন্দোলনের সময় আমি অনুভব করি, ফন্টের মাধ্যমেও প্রতিবাদ ও বিপ্লবের ভাষা তুলে ধরা সম্ভব। একদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরুলের একটি কবিতার লাইন লিখলাম ব্রাশপেনে– ‘আমি চিনেছি আমারে আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ।’ এই লাইনটি দেয়াল লিখনের অভিজ্ঞতা থেকে আঁকা হয়েছিল, যেখানে আন্দোলনের আবেগ স্পষ্ট ছিল। তখন মনে হলো, এই শৈল্পিক প্রকাশকে একটি পূর্ণাঙ্গ ফন্টে রূপ দেওয়া দরকার। এই ভাবনা থেকে জন্ম নেয় লিপিকলার প্রথম আনুষ্ঠানিক ফন্ট ‘দ্রোহ’– বাংলার প্রথম প্রতিবাদী টাইপফেস।” দ্রোহ: আন্দোলনের ভাষায় এক বিপ্লববাংলা প্রথম প্রতিবাদী টাইপফেস দ্রোহ সম্পর্কে জানতে চাইলে কাজী যুবাইর মাহমুদ বলেন, “১ আগস্ট ২০২৪, আমি লিপিকলা থেকে ‘দ্রোহ’ ফন্টের ঘোষণা দিই। ২ আগস্ট এটি উন্মুক্ত করা হয় মাত্র এক দিনে পাঁচশর বেশি অক্ষর ডিজাইন করে। আন্দোলনের ভাষা ধারণ করে দ্রোহ ফন্টটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রশিবির, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান আজও বিভিন্ন স্লোগানে, ব্যানারে, প্ল্যাকার্ডে এই ফন্ট ব্যবহার করছে। এটি আমার জন্য এক বিশাল প্রাপ্তি, যা আমাকে আরও নতুন নতুন ফন্ট তৈরির অনুপ্রেরণা দেয়।” আগামীর স্বপ্নলিপিকলা ও নিজের ব্যক্তিগত স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে তরুণ এই স্বপ্নবাজ বলেন, “যে কোনো মিডিয়া ও করপোরেট হাউসের ব্র্যান্ড আইডেনটিটির জন্য নিজস্ব ফন্ট দরকার হয়। ব্র্যান্ড আইডেনটিটির কোয়ালিটি চরিত্র বজায় রেখে ইউনিক ফন্ট প্রোভাইড টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়ার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান বা প্ল্যাটফর্ম নেই বললেই চলে। লিপিকলা টিম সেই অভাব পূরণের জন্য প্রস্তুত। লিপিকলা শুধু ফন্ট তৈরির জন্য নয়; বরং বাংলা অক্ষরশিল্পের প্রতিটি শাখাকে উন্নত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। সম্প্রতি অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এ আমরা টাইপোগ্রাফার এইচ এম খালিদের লেখা ‘ক্যালিগ্রাফি, টাইপোগ্রাফি ও লেটারিং’ বইটি প্রকাশ করেছি। ২০০ পৃষ্ঠার এই বই বাংলা টাইপোগ্রাফির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রিসোর্স, যা নতুনদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে। এ ছাড়া আমরা বেশ কিছু কাজ করছি লিপিকলা নিয়ে। https://lipikola.com– এই ওয়েবসাইটে চোখ রাখলে বিস্তারিত জানতে পারবেন পাঠক।” বাংলা ভাষা ও টাইপোগ্রাফির এই নতুন যাত্রায় লিপিকলা টাইপ ফাউন্ড্রি এক অনন্য মাইলফলক সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। আমরা স্বপ্ন দেখি, এই তরুণদের হাত ধরে একদিন বাংলা টাইপোগ্রাফি বিশ্বমানের স্তরে পৌঁছাবে। লিপিকলা হবে সেই অভিযাত্রার অন্যতম অগ্রদূত। Read from Samakal E-Peper The Daily Samakal Nationl Newspaper `বাংলার প্রথম প্রতিবাদী টাইপফেস ও লিপিকলা টাইপ ফাউন্ড্রি’ দিন দিন বাংলা ফন্ট বর্ণিল হয়ে উঠছে। দেশের তরুণরা বাংলা টাইপোগ্রাফির জগতে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। তারা বাংলা টাইপ ডিজাইন ও ফন্ট অর্থের বিনিময়ে কেনার মতো মূল্যবান করে তুলছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে বাংলা লিপির নান্দনিক উৎকর্ষে কাজ করা এমনই দুই তরুণের সৃজনশীল জগৎ লিপিকলা ও বেঙ্গল ফন্টস-এর কথা তুলে ধরছেন আশিক মুস্তাফা   বাংলা টাইপোগ্রাফির জগতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে লিপিকলা টাইপ ফাউন্ড্রি। এই উদ্যোগ শুধু একটি ফন্ট ডেভেলপমেন্ট প্ল্যাটফর্মই নয়, বরং বাংলা অক্ষরশিল্পের এক বিস্তৃত শৈল্পিক গবেষণাগার। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান কাজী যুবাইর মাহমুদ। কেন এই পথে হাঁটলেন– এমন প্রশ্নের উত্তরে কাজী যুবাইর মাহমুদ বলেন, ‘লিপিকলা টাইপ ফাউন্ড্রির পেছনে রয়েছে এক দীর্ঘ স্বপ্নের পরিক্রমা। শৈশব থেকেই বাংলা অক্ষরশিল্পের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও চর্চা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। পৃথিবীর অন্যান্য ভাষার জন্য শত শত উন্নতমানের ফন্ট পাওয়া গেলেও বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে সেই ঘাটতি স্পষ্ট। বিশ্বের ৩০ কোটির বেশি মানুষ বাংলায় কথা বলে, অথচ আমাদের ভাষার জন্য শিল্পমানে উত্তীর্ণ ফন্টের সংখ্যা খুবই কম। অন্যান্য ভাষার চেয়ে বাংলায় ফন্ট তৈরি করা অতিরিক্ত কষ্টসাধ্য কাজ। যুক্তবর্ণসহ বিশালসংখ্যক গ্লিফ তৈরি করতে হয় বাংলায়, যা সময়সাপেক্ষ ও জটিল। একই সঙ্গে অক্ষরের শেইপ ঠিক রেখে প্রতিটি গ্লিফস করার মতো ডিজাইনার বিরল। বর্তমানে ডিজাইন ও টাইপোগ্রাফির আধুনিকতার যুগে এসেও আমরা হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি উন্নত ও সুপার ফিনিশড বাংলা ফন্ট দেখতে পাই। এ ছাড়া রাস্তাঘাটে, বিলবোর্ডে, লোগোতে কিংবা পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে ব্যবহৃত বাংলা টাইপোগ্রাফির বেশির ভাগই অপরিপক্ব, অপরিকল্পিত ও দুর্বল মনে হয়। এটি আমাকে ব্যথিত করে। সেই অভাববোধ থেকেই জন্ম নেয় লিপিকলা।’ লিপিকলার যাত্রাকবে শুরু লিপিকলার যাত্রা– এই প্রশ্নের উত্তরে কাজী যুবাইর মাহমুদ বলেন, “২০২০ সালে করোনাকালীন সংকটের মধ্যে আমি লিপিকলার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে শুরু করি। গত পাঁচ বছরে আমরা প্রায় ১০০টি ফন্ট ডিজাইন করেছি। এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে লিপিকলার ঘোষণা দেওয়া হয়নি। এর আগেই দেশে ঘটে গেছে এক গণঅভ্যুত্থান, স্বৈরাচারের পতন। এ আন্দোলনের সময় আমি অনুভব করি, ফন্টের মাধ্যমেও প্রতিবাদ ও বিপ্লবের ভাষা তুলে ধরা সম্ভব। একদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরুলের একটি কবিতার লাইন লিখলাম ব্রাশপেনে– ‘আমি চিনেছি আমারে আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ।’ এই লাইনটি দেয়াল লিখনের অভিজ্ঞতা থেকে আঁকা হয়েছিল, যেখানে আন্দোলনের আবেগ স্পষ্ট ছিল। তখন মনে হলো, এই শৈল্পিক প্রকাশকে একটি পূর্ণাঙ্গ ফন্টে রূপ দেওয়া দরকার। এই ভাবনা থেকে জন্ম নেয় লিপিকলার প্রথম আনুষ্ঠানিক ফন্ট ‘দ্রোহ’– বাংলার প্রথম প্রতিবাদী টাইপফেস।” দ্রোহ: আন্দোলনের ভাষায় এক বিপ্লববাংলা প্রথম প্রতিবাদী টাইপফেস দ্রোহ সম্পর্কে জানতে চাইলে কাজী যুবাইর মাহমুদ বলেন, “১ আগস্ট

Scroll to Top
Lipikola-Logo