প্রকাশকের কথা - ক্যালিগ্রাফি, টাইপোগ্রাফি ও লেটারিং

আমাদের সমাজে শিল্পের বিভিন্ন শাখা বিকশিত হয়েছে এবং সেগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো ক্যালিগ্রাফি, টাইপোগ্রাফি ও লেটারিং শিল্প।
প্রতিটি অক্ষরের আঙ্গিক, অঙ্গসজ্জা এবং স্থিতি যেমন ভাষার সৌন্দর্য প্রকাশে অবদান রাখে, তেমনি তা আমাদের চেতনাগত পৃথিবীকে শিল্পের মাধ্যমে পরিপূর্ণ করে তোলে। এই বিশাল শিল্প জগতের প্রতিটি কৌশল ও প্রক্রিয়া যেন এক একটি অনবদ্য সূচনা, যা আমরা চিরকাল অনুধাবন করতে পারি। এই বইটির লেখক এইচ এম খালিদ একজন পরিশ্রমী ও অভিজ্ঞ শিল্পী, খালিদ দীর্ঘদিন ধরে ক্যালিগ্রাফি, টাইপোগ্রাফি ও লেটারিং বিষয়ে গভীর গবেষণা ও চর্চা করে আসছেন। তার প্রজ্ঞা এবং দক্ষতার প্রতিফলন এই বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠায় স্পষ্ট। এই গ্রন্থের মাধ্যমে ক্যালিগ্রাফি, টাইপোগ্রাফি এবং লেটারিংয়ের মৌলিক দিকগুলো তুলে ধরেছেন এবং সেগুলোর চর্চার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছেন।
তার অভিজ্ঞতার আলোকে এই তিনটি শাখার একে অপরের সাথে সম্পর্ক, পার্থক্য এবং সৃজনশীল ব্যবহারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনায় গভীরতা এনেছেন। ক্যালিগ্রাফি, টাইপোগ্রাফি এবং লেটারিং—এই তিনটি বিষয় মূলত লেখনী বা অক্ষরের মাধ্যমে শিল্পের যে নবতম দিকগুলি প্রকাশিত হয়, তারই প্রতিফলন।
ক্যালিগ্রাফি, যা সাধারণত হাতে লেখা অথবা ব্রাশের মাধ্যমে অক্ষর চিত্রণ, একটি পুরনো শিল্প হিসেবে পরিচিত। এটি শুধু অক্ষর সৃষ্টি নয়, বরং অক্ষরের মাধ্যমে সৌন্দর্য সৃষ্টি, অনুভূতি প্রকাশ এবং ভাবনার গভীরতা নিপুণভাবে তুলে আনা। টাইপোগ্রাফি, যার মাধ্যমে আমরা ছাপার অক্ষরের ডিজাইন এবং ব্যবহারের মাধ্যমে ভাবনাগুলিকে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করি। এটি বিজ্ঞাপন, গ্রাফিক ডিজাইন এবং বই ছাপার শিল্পে একটি অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর লেটারিং, যেটি ক্যালিগ্রাফির একটি আঙ্গিক, সেই লেখা শৈলীর মাধ্যমে আরও ব্যক্তিগত ও বৈশিষ্ট্যময়তা যোগ করে, এটি ডিজাইন ও আর্কিটেকচারে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে।
এই বইয়ের মাধ্যমে লেখক পাঠকদের শুধু একাডেমিক জ্ঞান প্রদানই করেননি, বরং তারা কীভাবে নিজেরা এই শিল্পের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠতে পারেন, কীভাবে এই কৌশলগুলির মজা নিতে পারেন এবং কীভাবে সৃজনশীলতার মাধ্যমে তাদের নিজের লেখনীর দক্ষতা বিকাশ করতে পারেন, সে বিষয়ে বিশদ পরামর্শ দিয়েছেন। বইটির প্রতিটি অধ্যায়ে প্রাঞ্জল ভাষায় যে বিষয়গুলোর আলোচনা করা হয়েছে, তা কেবলমাত্র শিক্ষার্থী, শিল্পী, ডিজাইনার কিংবা সৃজনশীল মানুষদের জন্যই নয়; বরং সকল পাঠকের জন্যই মূল্যবান। প্রতিটি অধ্যায় এক একটি চমৎকার উদাহরণ এবং নির্দেশনা প্রদান করে। যা প্রমাণ করে, ক্যালিগ্রাফি, টাইপোগ্রাফি এবং লেটারিং কেবল একটি শৈল্পিক ক্ষেত্রই নয়, বরং তা আমাদের সংস্কৃতি এবং সমাজের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। লিপিকলা টাইপ ফাউন্ড্রীর পক্ষ থেকে আমরা খুবই আনন্দিত যে, এই বিশাল শিল্পকর্মের গুরুত্বকে তুলে ধরে এইচ এম খালিদ রচিত এই গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারছি। বইটি কেবল বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের নানা প্রান্তে যারা এই শিল্পের প্রতি আগ্রহী, তাদের জন্য একটি দিশারী হিসেবে কাজ করবে বলে আমরা আশা করি। বইটি শুধু একজন শিক্ষার্থী বা শিল্পীর জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবে না, বরং এটি গ্রাফিক ডিজাইনার, শিল্প সমালোচক, ডিজাইন শিক্ষার্থী ও শিল্পপ্রেমীদের জন্য একটি অমূল্য রেফারেন্স পুস্তক হয়ে উঠবে। লিপিকলা টাইপ ফাউন্ড্রীর একান্ত উদ্দেশ্য হলো, আমরা যেন পাঠকদের জন্য শুধু একটি বই প্রকাশ না করি, বরং তাদের জন্য একটি নতুন পৃথিবী, নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারি। ‘ক্যালিগ্রাফি, টাইপোগ্রাফি ও লেটারিং’ বইটি তাই লিপিকলা পরিবারের একটি অমূল্য রত্ন, যা আমাদের পাঠকদের জন্য নতুন অনুভূতির দরজা উন্মোচন করবে। একজন পাঠক হিসেবে আপনি যখন এই বইটি পড়বেন, তখন প্রতিটি পৃষ্ঠা আপনাকে ক্যালিগ্রাফির সুক্ষ্মতা, টাইপোগ্রাফির ডিজাইনশৈলী এবং লেটারিংয়ের সৃজনশীলতা সম্পর্কে গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করবে। এটি শুধু একটি বই নয়, বরং এক একটি শিল্পকর্ম, যা আপনার ভাবনার জগৎকে পরিবর্তন করে দিবে। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো, পাঠকদের মানসিকতা ও ভাবনার গভীরতায় নতুনত্ব আনা এবং তাঁদের সৃজনশীলতাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমরা এইচ এম খালিদ এর অসাধারণ কাজের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই এবং আশা করি, এই বইটি পাঠকদের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করবে।
ফাউন্ডার, লিপিকলা টাইপ ফাউন্ড্রী
