প্রথম আলো’র ফিচারে লিপিকলা

Nationl Newspaper

নিউজ

লিপিকলায় দ্রোহ ও মিছিলের ভাষা

মিছিলের স্লোগানে স্লোগানে সারা শহর উত্তপ্ত। শুধু শহর বলছি কেন, গোটা দেশ থেকেই এ যেন একই স্বরে আওয়াজ উঠছে সব দিক থেকে। ঢাকার প্রতিটি রাস্তা থেকে মিছিলে মিছিলে মানুষের ঢল। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সবার এক কণ্ঠস্বর। প্রত্যেক মানুষ তাঁর অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ শক্তি ও সামর্থ্য দিয়ে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে শুরু করে রাজপথ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গগনবিদারী স্লোগানে একটাই দাবি—দফা এক, দাবি এক/ স্বৈরাচারের পদত্যাগ। চারপাশে ভয়ের আবহ, তবু সেই ভয়কে উপেক্ষা করে সবাই রাস্তায় নেমেছেন।

এমন এক উত্তাল সময়ে, একজন বাংলা অক্ষরশিল্পের কারিগর হিসেবে, স্বৈরাচারের প্রতি ক্রোধ ও আক্রোশ আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করছিল। গলি থেকে ভেসে আসা প্রতিটি স্লোগান আমাকে অস্থির করে তুলেছিল।

আমার যাবতীয় কর্মযজ্ঞের ব্যস্ততা আর জীবনযাপনের ভেতর জুলাই আন্দোলনের প্রভাবে হঠাৎ কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কয়েকটি পঙ্‌ক্তি অবচেতনভাবে আমার চেতনাকে গ্রাস করে ফেলে।

নানান জায়গা থেকে সতর্কতামূলক সচেতনবার্তা আবার অন্যদিকে ঘোষণা দিয়ে একপ্রকার হুমকি প্রদান; আন্দোলনের অংশগ্রহণের পরিণতিতে আমার কী ক্ষয় হতে পারে, এ রকম সচেতনতার নামে হুমকি দেখিয়ে যেন মূক, অন্ধ ও বধির করে ফেলতে চাইছিল। কিন্তু প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলের সংবাদ এই সব ভয় স্পর্শ করেনি। এসব চাপ ও অস্থিরতার ভেতর দিয়েই অন্যদিকে অনবরত বেজে চলছে—

‘আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ
আমি চিনেছি আমারে
আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ।’

জুলাইয়ের ৩০ তারিখ। সারাটি দিন এই পঙ্‌ক্তি জপে চলছি মনে মনে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার মুহূর্তেও এই পঙ্‌ক্তি আমাকে ঘুমাতে দেয় না। একদিকে একের পর এক ছাত্রদের গুলি করে যাচ্ছে খুনির দল, অন্যদিকে দ্বিগুণ হয়ে ছাত্র-জনতা আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে। কারও মনে ভয় নেই, কারও পিছু হটার সুযোগ নেই। এমনকি যারা আন্দোলনে সরাসরি অংশ নিচ্ছেন না, তাঁদের মনেও প্রবল উত্তেজনা। মনে হচ্ছিল, পুরো জাতি যেন ঘুমহীন হয়ে পড়েছে।

ওই মৃত্যুর দিনগুলোর কথা ভেবে এখনো শিউরে উঠতে হয়। সেই সব দিনের অস্থিরতা অন্য অনেকের মতো আমাকেও ঘুমাতে দেয়নি। মাথার মধ্যে যে পঙ্‌ক্তি অনবরত চলতেই আছে; সেই বোঝা উত্তরণের একটি উপায় হঠাৎ আবিষ্কার করে মধ্যরাতে বিছানা ছেড়ে আমি উঠে পড়ি। উঠে, টেবিলে রাখা ব্রাশপেন নিয়ে কার্টিজ কাগজের ওপর অক্ষরের বিদ্রোহী চরিত্রে এই পঙ্‌ক্তি লিখি। অক্ষরের বিদ্রোহী চরিত্র কী?

পারিবারিক সুবাদে কৈশোর থেকেই দেয়াললিখনের চর্চা ছিল আমাদের। আমরা দেখি, দেয়াললিখনের আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র রয়েছে। বিশেষ করে বাম রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর প্রতিবাদ ও স্লোগানের প্রধান ক্যানভাস হলো দেয়াল। দেয়ালে দেয়ালে লেখা থাকে তাদের আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ও প্রতিবাদের ভাষা। সেসব ভাষার আকৃতি ও গঠন বাংলা অক্ষরশিল্পে অঘোষিতভাবেই একটা স্বাক্ষর তৈরি করেছে। যে স্বাক্ষরের নাম আমরা দিতে পারি ‘বিপ্লবী’। অর্থাৎ দেয়ালের গায়ে প্রতিবাদের ভাষা দেখে আমরা সহজে বুঝতে পারি, এটি বিপ্লবের ভাষা।

সেই বিপ্লব ও বিদ্রোহের স্বভাব-আকৃতিতে আমি নজরুলের বিদ্রোহী কবিতার সেই পঙ্‌ক্তি প্রাথমিকভাবে ব্রাশপেনে লিখি। ‘আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ/ আমি চিনেছি আমারে/ আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ।’

এই লেখার অক্ষরগুলোর চরিত্র ও স্বভাব তার নিজস্ব প্রতিবাদের ভাষা ধারণ করে। তারপর ডিজিটালি একটা কার্ড ডিজাইন করে এই লেখা সোশ্যাল মিডিয়ায় দিলে দেখি কিছুক্ষণের মধ্যেই এটি ছড়িয়ে পড়ে অনেক জায়গায়। মানুষ এই টাইপোগ্রাফির মধ্যে যেন নিজেদের আন্দোলনের প্রতিচ্ছায়া দেখতে পায়।

এই অনুপ্রেরণা থেকে ৩১ জুলাই সিদ্ধান্ত নিই এই টাইপফেস সম্পূর্ণ গ্লিফস বা অক্ষরসহ পূর্ণাঙ্গ ফন্ট আকারে উন্মুক্ত করে দিই সবার জন্য। এই আন্দোলন শুধু রাজপথেই নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ও ডিজিটাল মাধ্যমেও ছড়িয়ে দিতে হবে। এবং তখনই ওই উত্তাল পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে দিনরাত টানা কাজ করে তিন শর ওপরে গ্লিফস তৈরি করি এক দিনে।

লিপিকলার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই আমাদের সামনে হাজির হয়েছে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন। ফলে আমাদের দীর্ঘ প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা একদিকে রেখে, গণ-অভ্যুত্থানকে সামনে রেখে সিদ্ধান্ত নিই লিপিকলার প্রথম ফন্ট হবে ‘দ্রোহ’।

কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার অনুপ্রেরণায় জুলাই আন্দোলনকে উৎসর্গ করে এই ফন্টের নামকরণ করা হয় ‘দ্রোহ’। ‘দ্রোহ’ শুধু একটি ফন্ট নয়, এটি আন্দোলনের একটি ভাষা হিসেবে সাক্ষী হয়ে আছে। অভ্যুত্থানের অংশ হয়ে লিপিকলা ও দ্রোহ ছড়িয়েছে স্লোগানে স্লোগানে। আন্দোলনের প্রতিটি ব্যানারে, পোস্টারে, সোশ্যাল মিডিয়ার এই ফন্ট ব্যবহৃত হতে শুরু করে।

আমি অনুভব করলাম, টাইপোগ্রাফি শুধু নান্দনিকতার জন্য নয়, এটি সময়ের ভাষা হয়ে উঠতে পারে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা দেখেছি, অক্ষরের মধ্যেও প্রতিবাদ সম্ভব। লিপিকলা থেকে তৈরি এই ফন্ট শুধু ডিজিটাল স্পেসেই নয়, আন্দোলনের ব্যানার, পোস্টার এবং রাস্তার দেয়ালে লিখিত ভাষায় রূপান্তরিত হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা আমাকে আরও বেশি বিশ্বাস করিয়েছে যে বাংলা অক্ষরশিল্প একটি শক্তিশালী প্রতিবাদের মাধ্যম হতে পারে।

আমাদের সামনে এখনো অনেক পথ বাকি। এই ফন্ট কেবল শুরু, সামনে আরও অনেক ধরনের বৈশিষ্ট্যগত টাইপোগ্রাফি তৈরি করতে চাই। আমরা চাই, বাংলা অক্ষরও বিপ্লবের ভাষা হয়ে উঠুক। ‘দ্রোহ’ আমাদের প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু এটা শেষ নয়; বরং নতুন একটা অধ্যায়ের সূচনা।

লিপিকলা টাইপ ফাউন্ড্রি নামে একটি প্ল্যাটফর্ম শুরু করেছিলাম করোনাকালে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, বাংলা টাইপফেসের সম্ভাবনাকে আরও প্রসারিত করা। দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতির মধ্য দিয়েই ইতিমধ্যে প্রায় এক শটি বাংলা সম্পূর্ণ নতুন টাইপফেস লিপিকলা থেকে আমরা ডিজাইন করেছি।

Nationl Newspaper

লিপিকলায় দ্রোহ ও মিছিলের ভাষা

মিছিলের স্লোগানে স্লোগানে সারা শহর উত্তপ্ত। শুধু শহর বলছি কেন, গোটা দেশ থেকেই এ যেন একই স্বরে আওয়াজ উঠছে সব দিক থেকে। ঢাকার প্রতিটি রাস্তা থেকে মিছিলে মিছিলে মানুষের ঢল। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সবার এক কণ্ঠস্বর। প্রত্যেক মানুষ তাঁর অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ শক্তি ও সামর্থ্য দিয়ে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে শুরু করে রাজপথ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গগনবিদারী স্লোগানে একটাই দাবি—দফা এক, দাবি এক/ স্বৈরাচারের পদত্যাগ। চারপাশে ভয়ের আবহ, তবু সেই ভয়কে উপেক্ষা করে সবাই রাস্তায় নেমেছেন।

এমন এক উত্তাল সময়ে, একজন বাংলা অক্ষরশিল্পের কারিগর হিসেবে, স্বৈরাচারের প্রতি ক্রোধ ও আক্রোশ আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করছিল। গলি থেকে ভেসে আসা প্রতিটি স্লোগান আমাকে অস্থির করে তুলেছিল।

আমার যাবতীয় কর্মযজ্ঞের ব্যস্ততা আর জীবনযাপনের ভেতর জুলাই আন্দোলনের প্রভাবে হঠাৎ কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কয়েকটি পঙ্‌ক্তি অবচেতনভাবে আমার চেতনাকে গ্রাস করে ফেলে।

নানান জায়গা থেকে সতর্কতামূলক সচেতনবার্তা আবার অন্যদিকে ঘোষণা দিয়ে একপ্রকার হুমকি প্রদান; আন্দোলনের অংশগ্রহণের পরিণতিতে আমার কী ক্ষয় হতে পারে, এ রকম সচেতনতার নামে হুমকি দেখিয়ে যেন মূক, অন্ধ ও বধির করে ফেলতে চাইছিল। কিন্তু প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলের সংবাদ এই সব ভয় স্পর্শ করেনি। এসব চাপ ও অস্থিরতার ভেতর দিয়েই অন্যদিকে অনবরত বেজে চলছে—

‘আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ
আমি চিনেছি আমারে
আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ।’

জুলাইয়ের ৩০ তারিখ। সারাটি দিন এই পঙ্‌ক্তি জপে চলছি মনে মনে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার মুহূর্তেও এই পঙ্‌ক্তি আমাকে ঘুমাতে দেয় না। একদিকে একের পর এক ছাত্রদের গুলি করে যাচ্ছে খুনির দল, অন্যদিকে দ্বিগুণ হয়ে ছাত্র-জনতা আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে। কারও মনে ভয় নেই, কারও পিছু হটার সুযোগ নেই। এমনকি যারা আন্দোলনে সরাসরি অংশ নিচ্ছেন না, তাঁদের মনেও প্রবল উত্তেজনা। মনে হচ্ছিল, পুরো জাতি যেন ঘুমহীন হয়ে পড়েছে।

ওই মৃত্যুর দিনগুলোর কথা ভেবে এখনো শিউরে উঠতে হয়। সেই সব দিনের অস্থিরতা অন্য অনেকের মতো আমাকেও ঘুমাতে দেয়নি। মাথার মধ্যে যে পঙ্‌ক্তি অনবরত চলতেই আছে; সেই বোঝা উত্তরণের একটি উপায় হঠাৎ আবিষ্কার করে মধ্যরাতে বিছানা ছেড়ে আমি উঠে পড়ি। উঠে, টেবিলে রাখা ব্রাশপেন নিয়ে কার্টিজ কাগজের ওপর অক্ষরের বিদ্রোহী চরিত্রে এই পঙ্‌ক্তি লিখি। অক্ষরের বিদ্রোহী চরিত্র কী?

পারিবারিক সুবাদে কৈশোর থেকেই দেয়াললিখনের চর্চা ছিল আমাদের। আমরা দেখি, দেয়াললিখনের আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র রয়েছে। বিশেষ করে বাম রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর প্রতিবাদ ও স্লোগানের প্রধান ক্যানভাস হলো দেয়াল। দেয়ালে দেয়ালে লেখা থাকে তাদের আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ও প্রতিবাদের ভাষা। সেসব ভাষার আকৃতি ও গঠন বাংলা অক্ষরশিল্পে অঘোষিতভাবেই একটা স্বাক্ষর তৈরি করেছে। যে স্বাক্ষরের নাম আমরা দিতে পারি ‘বিপ্লবী’। অর্থাৎ দেয়ালের গায়ে প্রতিবাদের ভাষা দেখে আমরা সহজে বুঝতে পারি, এটি বিপ্লবের ভাষা।

সেই বিপ্লব ও বিদ্রোহের স্বভাব-আকৃতিতে আমি নজরুলের বিদ্রোহী কবিতার সেই পঙ্‌ক্তি প্রাথমিকভাবে ব্রাশপেনে লিখি। ‘আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ/ আমি চিনেছি আমারে/ আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ।’

এই লেখার অক্ষরগুলোর চরিত্র ও স্বভাব তার নিজস্ব প্রতিবাদের ভাষা ধারণ করে। তারপর ডিজিটালি একটা কার্ড ডিজাইন করে এই লেখা সোশ্যাল মিডিয়ায় দিলে দেখি কিছুক্ষণের মধ্যেই এটি ছড়িয়ে পড়ে অনেক জায়গায়। মানুষ এই টাইপোগ্রাফির মধ্যে যেন নিজেদের আন্দোলনের প্রতিচ্ছায়া দেখতে পায়।

এই অনুপ্রেরণা থেকে ৩১ জুলাই সিদ্ধান্ত নিই এই টাইপফেস সম্পূর্ণ গ্লিফস বা অক্ষরসহ পূর্ণাঙ্গ ফন্ট আকারে উন্মুক্ত করে দিই সবার জন্য। এই আন্দোলন শুধু রাজপথেই নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ও ডিজিটাল মাধ্যমেও ছড়িয়ে দিতে হবে। এবং তখনই ওই উত্তাল পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে দিনরাত টানা কাজ করে তিন শর ওপরে গ্লিফস তৈরি করি এক দিনে।

লিপিকলার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই আমাদের সামনে হাজির হয়েছে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন। ফলে আমাদের দীর্ঘ প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা একদিকে রেখে, গণ-অভ্যুত্থানকে সামনে রেখে সিদ্ধান্ত নিই লিপিকলার প্রথম ফন্ট হবে ‘দ্রোহ’।

কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার অনুপ্রেরণায় জুলাই আন্দোলনকে উৎসর্গ করে এই ফন্টের নামকরণ করা হয় ‘দ্রোহ’। ‘দ্রোহ’ শুধু একটি ফন্ট নয়, এটি আন্দোলনের একটি ভাষা হিসেবে সাক্ষী হয়ে আছে। অভ্যুত্থানের অংশ হয়ে লিপিকলা ও দ্রোহ ছড়িয়েছে স্লোগানে স্লোগানে। আন্দোলনের প্রতিটি ব্যানারে, পোস্টারে, সোশ্যাল মিডিয়ার এই ফন্ট ব্যবহৃত হতে শুরু করে।

আমি অনুভব করলাম, টাইপোগ্রাফি শুধু নান্দনিকতার জন্য নয়, এটি সময়ের ভাষা হয়ে উঠতে পারে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা দেখেছি, অক্ষরের মধ্যেও প্রতিবাদ সম্ভব। লিপিকলা থেকে তৈরি এই ফন্ট শুধু ডিজিটাল স্পেসেই নয়, আন্দোলনের ব্যানার, পোস্টার এবং রাস্তার দেয়ালে লিখিত ভাষায় রূপান্তরিত হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা আমাকে আরও বেশি বিশ্বাস করিয়েছে যে বাংলা অক্ষরশিল্প একটি শক্তিশালী প্রতিবাদের মাধ্যম হতে পারে।

আমাদের সামনে এখনো অনেক পথ বাকি। এই ফন্ট কেবল শুরু, সামনে আরও অনেক ধরনের বৈশিষ্ট্যগত টাইপোগ্রাফি তৈরি করতে চাই। আমরা চাই, বাংলা অক্ষরও বিপ্লবের ভাষা হয়ে উঠুক। ‘দ্রোহ’ আমাদের প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু এটা শেষ নয়; বরং নতুন একটা অধ্যায়ের সূচনা।

লিপিকলা টাইপ ফাউন্ড্রি নামে একটি প্ল্যাটফর্ম শুরু করেছিলাম করোনাকালে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, বাংলা টাইপফেসের সম্ভাবনাকে আরও প্রসারিত করা। দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতির মধ্য দিয়েই ইতিমধ্যে প্রায় এক শটি বাংলা সম্পূর্ণ নতুন টাইপফেস লিপিকলা থেকে আমরা ডিজাইন করেছি।

নিউজ

Scroll to Top
Lipikola-Logo